রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ পূর্বাহ্ন
মোঃ নাসির উদ্দীন গাজী, খুলনা বিভাগের বূরো চিফঃ প্রতিমা তৈরি করছেন শিল্পীরা.সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা এবার ৯ অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে। আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশম দিন পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব। জাঁকজমকপূর্ণভাবে আগামী ১৩ অক্টোবর শেষ হবে বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে। এ লক্ষ্য এবার খুলনায় ৯৯১টি মণ্ডপে পূজার আয়োজন চলছে। যা ২০২০ সালের চেয়ে ৪৫টি কম। দুর্গোৎসবকে ঘিরে মণ্ডপ ও প্রতিমা নির্মাণ স্থানে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তাসহ আলোকসজ্জার জন্য বিরামহীন বিদ্যুতের দাবি জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ।
কারণ বিদ্যুৎ না থাকলে দুষ্কৃতিকারীরা মণ্ডপে প্রবেশ করে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে পারে। বিগত দিনে মন্দিরে পুলিশসহ আনসার মোতায়েন থাকলেও এবার মন্দিরে আনসার ও কমিটির স্বেচ্ছাসেবকরা থেকে দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের টহল জোরদার করা হবে।এদিকে, পূজাকে কেন্দ্র করে মণ্ডপে মণ্ডপে শিল্পীরা সাজিয়ে তুলছেন প্রতিমা। অনেক মণ্ডপে কাজ শেষের দিকে রয়েছে।খুলনা জেলার ৯৯১টি পূজামণ্ডপের মধ্যে মহানগরে ১০১, বটিয়াঘাটায় ১১৩, ডুমুরিয়ায় ২১৪, তেরখাদায় ১০৭, পাইকগাছায় ১৫৫টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হবে। এ ছাড়া দাকোপে ৮৪, দিঘলিয়ায় ৬৩, ফুলতলায় ৩৪, রূপসায় ৭৪ ও কয়রা উপজেলায় ৪৬টি মণ্ডপে পূজা হবে।
সনাতনী মতে, এ বছর দেবী আসবেন ঘটকে (ঘোড়ায়) চড়ে। বিদায়ও নেবেন একই বাহনে। এর ফলে বিশ্বব্যাপী খরা, দুর্যোগ ও অশান্তি বাড়বে। আর ৯ অক্টোবর ষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে তিথি অনুযায়ী ১২ অক্টোবর সকালে নবমী ও রাতে দশমী পূজা হবে। কিন্তু প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে ১৩ অক্টোবর। একই দিন নবমী ও দশমী পূজা হলেও উৎসব ৫দিন চলবে।
জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নিদের্শনা মতে সব পূজামণ্ডপে আনসার সদস্যরা সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবে। এর সঙ্গে সেনা, নৌ, কোস্টগার্ড, পুলিশসহ যৌথবাহিনী পূজা শুরুর আগে থেকে উৎসবের দিনগুলোতে টহল দেবে। পূজামণ্ডপে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো হবে। সামাজিক,যোগাযোগমাধ্যমে গুজব বা মিথ্যা তথ্য ছড়ালে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আজান ও নামাজের সময় বাদ্যযন্ত্র বন্ধ থাকবে। ডিসি অফিস, ইউএনও ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ২৪ ঘণ্টা চালু রেখে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হবে।
প্রতিমার কারিগর সুদীপ সরকার বলেন, প্রতিমা তৈরির সরঞ্জামের দাম বেড়েছে। তবে আমরা বাড়তি দাম নিচ্ছি না। অন্য বছরের মতো প্রতি সেট প্রতিমা তৈরির জন্য ৫০-৬০ হাজার টাকাই দাবি করছি। মন্দির কমিটির লোকজনও তাতে দ্বিমত করেননি। তবে আমি এবার ৩ সেট প্রতিমার কাজ করছি। এখন মাটির শেষ প্রলেপের কাজ চলছে।
মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত কুমার কুন্ডু, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিমান সাহা মহানগর, জেলা ও উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে পূজা শুরুর পূর্ব হতে যৌথ বাহিনীর টহল বৃদ্ধির অনুরোধ জানিয়ে বলেন, এতে সবার মনে আরও সাহস সঞ্চার হবে। একইসঙ্গে হয়রানিমূলক মামলা থেকে পরিত্রাণের আহ্বান জানান,বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ মহানগর শাখার সভাপতি শ্যামল হালদার বলেন, নিরাপত্তা বিধানে রাতে যেন লোডশেডিং না হয়। দিনে লোডশেডিং হলেও কোনও সমস্যা হয় না। ইতিমধ্যে প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে মণ্ডপের তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে। দ্রুত চলছে প্রতিমা নির্মাণের কাজ। তিনি এই পূজা সম্পন্ন করতে প্রশাসনসহ সবার সহযোগিতা কামনা করছেন। খুলনার পুলিশ সুপার টি এম মোশাররফ হোসেন জানান, প্রশাসন ও স্থানীয়দের সঙ্গে চমৎকারভাবে সমন্বয় করে নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। আনন্দের সঙ্গে যাতে পূজা উদযাপিত হতে পারে তার জন্য পুলিশ টহল বৃদ্ধি করা হবে।
খুলনা মেট্রোপলিটন। পুলিশ (কেএমপি) পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, দুর্গাপূজা প্রস্তুতিকাল, চলাকালে ও প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশ সবোর্চ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নগরীর প্রতিটা পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন। প্রতিটা পূজামণ্ডপে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক দ্বারা সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তিনি পূজা উদযাপন পরিষদ নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান।ও সাবেক আন্তর্জাতিক মানবিকারের চেয়ারম্যান, মোঃ নাসির উদ্দীন গাজী বলেন বর্তমান সরকার অন্তর্বত্তী সরকার ও সরকারী দায়ত্বি নিয়ে সেনাবাহিনী পুলিশ কর্ম কর্তারা সহ সাধারণ মানুষ পাশে থাকবো ছাএরা পাশে থাকবো সবসময় সেই আশা রাখতে বলেন, নিজের যেকোনও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সংবাদ ক্ষণিকভাবে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ এর মাধ্যমে অথবা সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে জানাতে অনুরোধ করেন তিনি।
পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, আমরা সেই বাংলাদেশের প্রত্যাশা করি, যেখানে সব ধর্মের মানুষ নির্বিঘ্নে নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও আনন্দময় হবে দুর্গোৎসব। দুর্গাপূজা সুন্দরভাবে আয়োজনের জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে সামাজিক সৌহার্দ্য যুক্ত হলে একটি প্রাণবন্ত উৎসব উদযাপিত হবে। ভালোবাসা আর সাম্যের বন্ধন নিয়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা এই উৎসবে অংশ নেবো। এবার খুলনা জেলার মহানগরসহ ৯৯১টি পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে খুলনা মহানগরে ১০১টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। তবে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।